এক প্রস্তুতিতে অনেক পরীক্ষা

বিশ্ববিদ্যালয় তো অনেক। কোনগুলোতে পরীক্ষা দেবে_মনস্থির করতেই অনেকের গলদগর্ম অবস্থা। কোনোটিরই প্রস্তুতি তাই ঠিকঠাক হয়ে ওঠে না। অথচ একটু পরিকল্পনামাফিক এগোলে এক প্রস্তুতিতেই অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব।

মানবিক বিভাগ
একটু কৌশলী হলেই ভর্তি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের এক ঢিলে দুই কিংবা একাধিক পাখি মারার সুযোগ রয়েছে। জগন্নাথ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে

র পরীক্ষা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'খ' ইউনিটের আদলে। পরীক্ষা হয় এমসিকিউ পদ্ধতিতে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার ধরনও একই। ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের 'খ' ও 'ঘ' ইউনিটের প্রশ্নের ধরন একই রকম। এই দুই ইউনিটেই বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ বিজ্ঞান বিষয়ে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়ে থাকে।
গেলবারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় 'খ' ইউনিটে প্রথম হওয়া রাহনুমা সিদ্দিক জানান, মানবিক বিভাগের কোনো পরীক্ষার্থী যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'খ' ইউনিটকে টার্গেট করে প্রস্তুতি নেয়, তাহলে একই সঙ্গে তার 'খ' ও 'ঘ'_এই দুটি ইউনিটের প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে যায়। এমনকি জগন্নাথ, রাজশাহী ও চট্টগ্রামসহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও আলাদা করে পড়তে হয় না। জাহাঙ্গীরনগর এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও পরীক্ষা হবে এমসিকিউ পদ্ধতিতে। তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে চাইলে বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞানের পাশাপাশি গণিত পড়তে হবে। কারণ জাহাঙ্গীরনগরে ভর্তি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগের 'খ' ও 'গ' ইউনিটের পরীক্ষায় গণিত বিষয়ে ১০ নম্বরের প্রশ্ন থাকে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এ-১, এ-২, এ-৩, এ-৪ এবং 'ই' ইউনিটে আবেদন করার সুযোগ রয়েছে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের। এর মধ্যে এ-৩, এ-৪ এবং 'ই' ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা হবে এমসিকিউ পদ্ধতিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এখানেও বাংলা, ইংরেজি এবং সাধারণ জ্ঞান_এই তিনটি বিষয় থেকে ১০০ নম্বরের প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া হয়। জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন অনুষদে এমসিকিউ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'খ' ইউনিটের আদলে। তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন অনুষদের জন্য 'ঙ' ইউনিটে ইংরেজিতে ৫০ নম্বরের প্রশ্ন থাকে। অন্যদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন অনুষদে সাধারণ জ্ঞানে থাকে ৫০ নম্বর। পরীক্ষা হয় এমসিকিউ পদ্ধতিতে।
গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় 'ঘ' ইউনিটে মানবিক থেকে প্রথম হওয়া আনিচুর রহমান জানান, বাংলা বিষয়ের প্রস্তুতির জন্য নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণ এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রথম পত্র বইটি ভালোভাবে আত্মস্থ করতে হবে। ইংরেজির জন্য টেঙ্ট বইয়ের পাশাপাশি টোফেলসহ বাজারের অন্যান্য অনুশীলনমূলক বইয়ের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। গ্রামার অংশের জন্য দরকার বেশি বেশি অনুশীলন। সাধারণ জ্ঞানের পরিধি যেহেতু অনেক বড়, সেহেতু বিচক্ষণতার সঙ্গে টপিক বাছাই করতে হবে।

ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ
ভর্তি পরীক্ষায় ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের অনেক বেশি প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হয়। কারণ আসনের তুলনায় এই বিভাগে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মূলত 'গ' ইউনিটের মাধ্যমে ভর্তির সুযোগ পায় ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা, চট্টগ্রাম, জগন্নাথ এবং কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের প্রশ্নের ধরন প্রায় একই রকম। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা পদ্ধতিও একই। ভর্তি পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, হিসাববিজ্ঞান ও ম্যানেজমেন্ট থেকে প্রশ্ন করা হয়। ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষা হয় এমসিকিউ পদ্ধতিতে।
ব্যতিক্রম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে বিবিএর জন্য 'ঙ' ইউনিট এবং আইবিএর জন্য 'চ' ইউনিটের মাধ্যমে ভর্তি করা হয়। এই দুটো ইউনিটের পরীক্ষা এমসিকিউ পদ্ধতিতে হলেও হিসাববিজ্ঞান ও ম্যানেজমেন্ট থেকে কোনো প্রশ্ন আসে না। 'ঙ' ইউনিটে বাংলায় ১০, ইংরেজিতে ৩৫, গণিতে ৩৫ এবং সাধারণ জ্ঞানে ২০ নম্বরের প্রশ্ন আসে। আর 'চ' ইউনিটে বাংলায় ১০, ইংরেজিতে ৩৫, গণিতে ৩০, অ্যানালাইটিক্যাল অ্যাবিলিটিতে ৫ এবং সাধারণ জ্ঞানে ২০ নম্বর থাকে।
২০১১-১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় 'গ' ইউনিটে প্রথম হওয়া গোলাম মাওলা স্বাধীন জানান, প্রস্তুতির ক্ষেত্রে একটু কৌশলী হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'গ' ইউনিটের প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দেওয়া যাবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ইংরেজি গুরুত্ব দিয়ে পড়লে 'গ' ইউনিট ছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ঘ' ইউনিট এবং আইন অনুষদের অধীনে ভর্তি পরীক্ষায় সুফল পাওয়া যাবে। প্রতিবছরই দেখা যায়, ভর্তি পরীক্ষায় প্রায় সাত-আটটি প্রশ্ন আসে ভোকাবুলারিভিত্তিক। যেমন_সিনোনিম, অ্যান্টোনিম, অ্যানালজি ইত্যাদি থেকে প্রশ্ন আসে।
অ্যাকাউন্টিংয়ে ২৫টি প্রশ্নের মধ্যে দেখা যায়, ১৮-২০টি প্রশ্ন হয়ে থাকে তত্ত্বীয়। তবে শুধু না বুঝে তত্ত্ব মুখস্থ করলে কোনো কাজে আসবে না। একটু মনোযোগী হলেই ম্যানেজমেন্টে পুরো নম্বর তোলা সম্ভব। এর জন্য বই থেকে বেশি বেশি চর্চা করতে হবে। বাংলার জন্যও পাঠ্য বইয়ের বিকল্প নেই। ব্যাকরণ অংশের জন্য নবম-দশম শ্রেণীর বোর্ড বই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়লে ভালো করা যাবে।

বিজ্ঞান বিভাগ
'ভর্তি প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা। কারণ তাদের সামনে একই সঙ্গে বুয়েট, মেডিক্যাল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির দরজা খোলা থাকে। তাই কোনটা ফেলে কোনটার প্রস্তুতি নেবে, এ নিয়ে দোটানায় ভোগে পরীক্ষার্থীরা।' বললেন ২০১১-১২ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকারী রাফসান হোসেন।
রাফসান জানান, বুয়েটের প্রস্তুতি নিলে একসঙ্গে হয়ে যাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর 'ক' ইউনিটের ভর্তি প্রস্তুতি। একই সঙ্গে নেওয়া সম্ভব জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ঘ' ইউনিটের, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ছ' ইউনিটের এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের 'সি-১' ও 'সি-২' ইউনিটের প্রস্তুতি। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হবে এমসিকিউ পদ্ধতিতে। এর সঙ্গে যদি তারা বাংলা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে পড়ে, তাহলে জাহাঙ্গীরনগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ঙ' ইউনিট (আইন অনুষদ) এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের 'এ-৩', 'এ-৪', 'এ-৫', 'বি' ও 'ই' ইউনিটের ভর্তি প্রস্তুতি হয়ে যাবে। একই সঙ্গে হয়ে যাবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিও।
ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদে আবেদন করতে পারবেন বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা। সব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় প্রশ্নের ধরন একই।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত ও জীববিদ্যা বিষয়ে এমসিকিউ পদ্ধতিতে ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষা হয়। আর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমসিকিউ পদ্ধতিতে মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হয় পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত, জীববিদ্যা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে।

Comments